বর্তমানে পৃথিবীতে বাস করছে লাখ লাখ বিভিন্ন জাতের প্রাণী। এদের আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য যেমন ভিন্নতর তেমন বিচিত্র এদের জীবনধারা, স্বভাব, খাদ্য ও খাদ্যগ্রহণ পদ্ধতি। দেহের বৃদ্ধি, শক্তি ও বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি প্রাণীর খাদ্য অপরিহার্য। অতএব মানবদেহকে সুস্থ-সকল রাখার জন্যও খাদ্য অপরিহার্য। খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা অর্জন করা দেহকে সুস্থ রাখার পূর্বশর্ত। আমিষ, শর্করা, জেল ও চ ইত্যাদি জৈবযৌগ আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। আর এ সকল খাদ্য থেকে পুষ্টি পাই। খাদ্য বলতে সেই সকল জৈব উপাদানকে বোঝায় যেগুলো জীবের দেহ গঠন, ক্ষয়পূরণ ও শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। আার এ খাদ্য থেকে জীৰ পুষ্টি লাভ করে।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আম-
• বিভিন্ন খাদ্যের পুষ্টিগুণ ব্যাখ্যা করতে পারব;
• পুষ্টির অভাবজনিত রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধের উপায় বর্ণনা করতে পারব;
• চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য নির্বাচন করতে পারব।
সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মিতা রাতে চোখে ঝাপসা দেখে। ডাক্তার তাকে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় পাকা পেঁপে, পাকা আম, মলা ও ঢেলা রাখতে বললেন । অন্যদিকে তার ছোট ভাইয়ের ঠোঁট পুরু এবং জিহ্বা বড় হয়ে যাচ্ছে।
রাকিব ও হৃদয় দুই বন্ধু একই স্কুলে পড়াশোনা করে। গ্রীষ্মের ছুটিতে হৃদয় ও রাকিব এবং তাঁদের বাবা-মায়ের সাথে গ্রামের বাড়ি রংপুরে বেড়াতে যায়। হৃদয় লক্ষ করল সেখানকার অনেক মানুষেরই গলাফোলা এবং তাঁদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
রংপুরের দিন মজুর রহিম শেখের স্ত্রীর গলার থাইরয়েড গ্রন্থি ক্রমশ বড় হতে থাকে। ফলে গলা ফুলে যায়। শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং খুব দুর্বলতাবোধ করে।
ইঞ্জিন চালানোর জন্য কয়লা, ডিজেল, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি উপাদান ব্যবহার করা হয়। বলতে পারো, এ জ্বালানিগুলোর কাজ কী? এ জ্বালানিগুলো পুড়ে শক্তি উৎপন্ন করে। আর এ শক্তি যানবাহনগুলোকে গতি দান করে। যানবাহনগুলো চলতে থাকে। মানবদেহকে একটি ইঞ্জিনের সাথে তুলনা করা হয়। অন্যান্য ইঞ্জিনের মতো আমাদের দেহ নামক ইঞ্জিনটি চালানোর জন্য চাই শক্তি। মানবদেহ এ শক্তি কোথা থেকে পায়? খাদ্য আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে ও শক্তি যোগায়। খাদ্যের মূল উৎস সজীব দেহ। খাদ্য মূলত বিভিন্ন যৌগের সমন্বয়ে গঠিত। আমরা উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে মূলত খাদ্য পাই। খাদ্য বলতে সেই জৈব উপাদানকে বোঝায় যা জীবের দেহ গঠন ও শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। খাদ্যের মধ্যে যে সকল উপাদান বা পুষ্টিদ্রব্য থাকে তা আমাদের দেহে প্রধানত তিনটি কাজ করে। যথা-
• জীবের বৃদ্ধি সাধন, ক্ষয়পূরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ
• তাপশক্তি ও কর্মশক্তি প্রদান ।
• রোগ প্রতিরোধ, সুস্থতা বিধান ও শারীরবৃত্তীয় কাজ (যেমন : পরিপাক, শ্বসন, রেচন ইত্যাদি) নিয়ন্ত্রণ করে।
পুষ্টি একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়াতে খাদ্যবস্তু খাওয়ার পরে পরিপাক হয় এবং জটিল খাদ্য উপাদানগুলো ভেঙ্গে সরল উপাদানে পরিণত হয়। দেহ এসব সরল উপাদান শোষণ করে নেয়। শোষণের পরে খাদ্য উপাদানগুলো দেহের সকল অঙ্গের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষের পুনর্গঠন ও দেহের বৃদ্ধির জন্য নতুন কোষ গঠন করে। তাছাড়া তাপ উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুষ্টি যোগায়। দেহে খাদ্যের এই সকল কাজই পুষ্টি প্রক্রিয়ার অন্তর্গত। অর্থাৎ পুষ্টি উপাদান হচ্ছে প্রতিদিনের খাবারের গুণসম্পন্ন সেসব উপাদান যা দেহের শক্তি ও যথাযথ বৃদ্ধি নিশ্চিত করে, মেধা ও বুদ্ধি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ করে, অসুখ-বিসুখ থেকে তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে সাহায্য করে এবং মানুষকে কর্মক্ষম করে।
কোন খাদ্যে কী পরিমাণ ও কত রকম খাদ্য উপাদান থাকে তার উপর নির্ভর করে খাদ্যের পুষ্টিমান বা পুষ্টিমূল্য। যেমন- সিদ্ধ চালে ৭৯% শ্বেতসার, ৬% স্নেহ পদার্থ থাকে। এছাড়া সামান্য পরিমাণ আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। ১০০ গ্রাম চাল থেকে ৩৪৫-৩৪৯ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। সিদ্ধ চালে শ্বেতসার, আমিষ ও ভিটামিন থাকে। কিন্তু এতে শ্বেতসারের পরিমাণ বেশি থাকে। অতএব চাল একটি শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ।
কোনো খাদ্য উপাদানের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হলে ঐ খাদ্যের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। খাদ্যের প্রকৃতি বলতে এটা কি মিশ্র খাদ্য, নাকি বিশুদ্ধ খাদ্য তাকে বোঝায়। মিশ্র খাদ্যে একের অধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। যেমন- দুধ, ডিম, খিচুরি, পেয়ারা ইত্যাদি। অন্যদিকে বিশুদ্ধ খাদ্যে শুধুমাত্র একটি উপাদান থাকে। যেমন- চিনি, গ্লুকোজ। এতে শর্করা ছাড়া আর কোনো উপাদান থাকে না।
খাদ্য অনেকগুলো রাসায়নিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এ রাসায়নিক উপাদানগুলোকে খাদ্য উপাদান বলা হয়। কেবলমাত্র একটি উপাদান দিয়ে গঠিত এমন খাদ্যবস্তুর সংখ্যা খুবই কম। উপাদান অনুযায়ী খাদ্যবস্তুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১. আমিষ বা প্রোটিন – ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন ও দেহ গঠন করে।
২. শর্করা বা শ্বেতসার শক্তি উৎপাদন করে। -
৩. স্নেহ বা চর্বি – ভাগ ও শক্তি উৎপাদন করে।
এছাড়া অন্যান্য তিন প্রকার উপাদান বিশেষ প্রয়োজন। যথা—
১. খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন - রোগ প্রতিরোধ, শক্তি বৃদ্ধি, বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার উদ্দীপনা যোগায়।
২. খনিজ লবণ – - বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ার অংশ নেয়।
৩. পানি দেহে পানির সমতা রক্ষা করে, কোষের গুণাবলি নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষ অঙ্গাণুসমূহকে ধারণ ও তাপের সমতা রক্ষা করে।
শর্করা বা শ্বেতসার
আমরা নাস্তায় রুটি, মুড়ি, চিড়া, পাউরুটি ইত্যাদি খাই। এগুলো শর্করা জাতীয় খাদ্য। শর্করা শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানগুলোর মধ্যে শর্করার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। শর্করা সহজপাচ্য। সব শর্করাই কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এই তিনটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। শর্করা দেহের কর্মক্ষমতা যোগায়। গ্লুকোজ এক ধরনের সরল শর্করা।
রাসায়নিক গঠনপদ্ধতি অনুসারে সব শর্করাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। একটি মাত্র শর্করা অণু দিয়ে গঠিত হয় মনোস্যাকারাইড। একে সরল শর্করাও বলে। দ্বি-শর্করা ও বহু শর্করা পরিপাকের মাধ্যমে সরল শর্করায় পরিণত হয়ে দেহের শোষণযোগ্য হয়। মানবদেহ পরিপুষ্টির জন্য সরল শর্করা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানবদেহ শুধুমাত্র সরল শর্করা গ্রহণ করতে পারে। গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, গ্যালাকটোজ এ তিনটি শর্করার মধ্যে গ্লুকোজ রাষ্ট্রের মাধ্যমে সারা দেহে পরিবাহিত হয়।
শর্করা, স্নেহ ও পার্মিকের মধ্যে শর্করা সর্বাপেক্ষা সহজপাচ্য। দেহে শোষিত হওয়ার পর শর্করা খুব কম সময়ে তাপ উৎপন্ন করে দেহে শক্তি যোগায়। ১ গ্রাম শর্করা ৪ কিলোক্যালরি তাপ উৎপন্ন করে। মানবদেহে প্রায় ৩০০-৪০০ গ্রাম শর্করা জমা থাকতে পারে। এ পরিমাণ শর্করা ১২০০-১৬০০ কিলোক্যালরি তাপ উৎপন্ন করে দেহের শক্তি যোগায়।
ব্যাস, দেহের ওজন, উচ্চতা, পরিপ্রমের মাত্রার উপর শর্করার চাহিদা নির্ভর করে। একজন পূর্ণ বয়স্ক পুরুষের দৈনিক শর্করার চাহিদা তার দেহের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের ৪.৬ গ্রাম হয়ে থাকে। একজন ৬০ কেজি ওজনের পুরুষ মানুষের গড়ে দৈনিক শর্করার চাহিদা (Sox৪-৬) গ্রাম বা ২৭৬ গ্রাম। আমাদের মোট প্রয়োজনীয় ক্যালরির শতকরা ৬০-৭০ ভাগ শর্করা হতে গ্রহণ করা দরকার।
কাজ : শর্করা বা শ্বেতসারের উপস্থিতি নির্ণর প্রয়োজনীয় উপকরণ : এরারুট প্রবণ বা ভাতের মাড়, টেস্ট টিউব, আয়োডিন, পানি ও ড্রপার পদ্ধতি : সামান্য পরিমাণ এরারুট দ্রবণ বা ভাতের মাড় একটি টেস্টটিউবে নাও এবং এর সাথে সামান্য পরিমাণ পানি মেশাও। এবার এর ভিতর দুই-তিন ফোঁটা আয়োডিন দ্রবণ মেশাও। কী ঘটে দেখ? প্রবণটি নীল বর্ণ ধারণ করবে। এ থেকে উক্ত প্রবণে শর্করা বা শ্বেতসারের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। |
অভাবজনিত রোগ
আহারে কম বা বেশি শর্করা গ্রহণ উতাই দেহের জন্য ক্ষতিকর। শর্করার অভাবে অপুষ্টি দেখা দেয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে দেহে বিপাক ক্রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে হাইপোপ্লাইমিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।
যেমন— ক্ষুধা অনুভব করা, বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত ঘামানো, কৃৎকম্পন বেড়ে বা কমে যাওয়া।
নামিব বা প্রোটিন
আমিষ আমাদের দেহের গঠন উপাদান। কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও সালফারের সমন্বয়ে আমিষ পঠিত। আমিষে ১৬% নাইট্রোজেন থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানে আমিব একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। আমিষ হলো অ্যামাইনো এসিডের একটি জটিল যৌগ পরিপাক প্রক্রিয়া যারা এটি দেহে শোষণ উপযোগী অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয়। এ পর্যন্ত প্রকৃতিজাত দ্রব্যে ২২ প্রকার অ্যামাইনো এসিডের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমরা বাংলা বা ইংরেজি বর্ণমালাগুলো সাজিয়ে যেমন অসংখ্য শব্দ গঠন করতে পারি, তেমনি ২২টি অ্যামাইনো এসিড বিভিন্ন সংখ্যায়. বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন আঙ্গিকে মিলিত হয়ে আমিষের উৎপত্তি ঘটায়। এ কারণে মাছ, দুধ, মাংস ইত্যাদি খাবারের স্বাদ, পদ্ম ও বর্ণের তারতম্য দেখা যায়।
দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও নাইট্রোজেনের সমতা রক্ষার জন্য অ্যামাইনো এসিড অত্যন্ত প্রয়োজন। কিছু কিছু অ্যামাইনো এসিডকে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড বলে। অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড দেহে তৈরি হয় না। খাদ্য থেকে এ অ্যামাইনো এসিডগুলো সংগ্রহ করতে হয়।
অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিডের অভাব ঘটলে নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন— বমি বমি ভাব, মূত্রে জৈব এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, নাইট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় না থাকা ইত্যাদি।
সব আমিষ দেহে সমান পরিমাণে শোষিত হয় না। আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করার পর এর শতকরা যত ভাগ অস্ত্র থেকে দেহে শোষিত হয় ভদ্র ভাগকে সেই আমিবের সহজপাচ্যতার গুণক ধরা হয়। সহজপাচ্যতার উপর আমিষের পুষ্টিমান নির্ভর করে। যে আমিষ শতকরা ১০০ ভাগই দেহে শোষিত হয় এবং দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণে কাজ করে তার সহজপাচ্যতার গুণক ১। এক্ষেত্রে আমিষ গ্রহণ এবং দেহের ধারণের পরিমাণ সমান। সহজ অর্থে বলতে গেলে যতটুকু আমিষ গ্রহণ করা হয় তার সম্পূর্ণটাই দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণে কাজ করে। আর তা না হলে সহজপাচ্যতার গুণক ১ হতে কম হয়। মায়ের দুধ ও ডিমের আমিষের সহজপাচ্যতার গুণক ১। অন্যান্য সব আমিষেরই সহজপাচ্যতার গুণক ১ হতে কম।
কাজ : আমিষের উপস্থিতি নির্ণয় প্রয়োজনীয় উপকরণ : ডিমের সাদা অংশ, হামানদিস্তা, পানি, টেস্টটিউব, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, কপার সালফেট |
আমিষের অভাবজনিত রোগ
খাদ্যে পরিমিত প্রয়োজনীয় জৈব আমিষ বা মিশ্র আমিষ না থাকলে শিশুর দেহে আমিষের অভাবজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগলে দেহের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শিশুদের কোয়াশিয়রকর ও মেরাসমাস রোগ দেখা দেয়।
কোয়াশিয়রকর রোগের লক্ষণ
• শিশুদের খাওয়ায় অরুচি হয়।
• পেশি শীর্ণ ও দুর্বল হতে থাকে, চামড়া এবং চুলের মসৃণতা ও রং নষ্ট হয়ে যায়।
• ডায়রিয়া রোগ হয়, শরীরে পানি আসে।
• পেট বড় হয়।
উপযুক্ত চিকিৎসার দ্বারা এ রোগ নিরাময় হলেও দেহে মানসিক স্থবিরতা আসে। কোয়াশিয়রকর রোগ মারাত্মক হলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।
মেরাসমাস রোগের লক্ষণ
• আমিষ ও ক্যালরি উভয়েরই অভাব ঘটে, ফলে দেহের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
• শরীর ক্ষীণ হয়ে অস্থিচর্মসার হয়।
• চামড়া বা ত্বক খসখসে হয়ে ঝুলে পড়ে।
• শরীরের ওজন হ্ৰাস পায়৷
শিশুদের জন্য এরূপ অবস্থা বিপজ্জনক। এছাড়া প্রোটিনের অভাবে বয়স্কদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও রক্তভা দেখা দেয়।
একে শক্তি উৎপাদনকারী উপাদান বলা হয়। স্নেহ পদার্থে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে। কার্বনের দহন ক্ষমতা বেশি থাকার স্নেহ পদার্থের অণু থেকে বেশি তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। স্নেহ পদার্থ ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগ। স্নেহ পদার্থ পরিপাক হয়ে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়। ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিনাইয়ের ভিতরে অবস্থিত লসিকা নালির মাধ্যমে শোষিত হয়। স্নেহ পদার্থে ২০ প্রকার চর্বি জাতীয় এসিড পাওয়া যায়। চর্বি জাতীয় এসিড দুই প্রকার। যথা- ১. অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড ও ২. সম্পৃক্ত চর্বি জাতীর এসিড।
দেহে যকৃতের মধ্যে চর্বি জাতীর এসিড তৈরি হয়। তবে স্বকৃতের চর্বি জাতীয় এসিড তৈরির ক্ষমতা অত্যন্ত কম। অন্যদিকে কিছু কিছু চর্বি জাতীয় এসিড আছে যা দেহের জন্য অত্যাবশ্যক। এগুলো প্রধানত উদ্ভিজ্জ তেলে পাওয়া যায়। খাদ্যে স্নেহ পদার্থের পরিমাণ দ্বারা এর উপকারিতা যাচাই করা যায় না। যে স্নেহ জাতীয় খাদ্যে অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড বেশি থাকে তা বেশি উপকারী। যেমন- সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, তিলের তেল, ভুট্টার তেল ইত্যাদি। এসব তেল দিয়ে তৈরি খাবার উৎকৃষ্টতর স্নেহ জাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। যেমন— মেরনিজ, সালাদ ড্রেসিং, কাসুন্দি, তেলের আচার ইত্যাদি উৎকৃষ্টতর স্নেহ জাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। যেসব খাদ্যে সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড বেশি থাকে সে সকল খাদ্যগুলোকে স্নেহবহুল খাদ্য বলা হয় । যেমন- মাংস, মাখন, পনির, ভালডা, চকলেট, বাদাম ইত্যাদি। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে দৈনিক মোট শক্তির ২০%-৩০% শক্তি স্নেহ থেকে পাওয়া যায়। দৈনিক আহার্যে এমন স্লেযুক্ত খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা অত্যাবশ্যকীয় চর্বি জাতীয় এসিড যোগাতে পারে এবং ভিটামিন দ্রবণে সক্ষম হয়।
খাদ্যে স্নেহ পদার্থের অভাব ঘটলে দেহের চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের অভাব পরিলক্ষিত হয় ফলে ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ দেখা দেয়। যেমন- ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে দেহের সৌন্দর্য নষ্ট করে, অত্যাবশ্যকীর চর্বি জাতীয় এসিডের অভাবে শিশুদের একজিমা রোগ হয় ও বয়স্কদের চর্মরোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায়।
কাজ : স্নেহ পদার্থের উপস্থিতি নির্ণয় প্রয়োজনীয় উপকরণ : সয়াবিন তেল, ইথানল ও পানি পদ্ধতি : একটি টেস্টটিউবে কয়েক ফোঁটা সয়াবিন তেল নাও। এর ভিতর সামান্য ইথানল মিশাও। : এবার টেস্টটিউবটিকে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নাও। এবার দ্রবণটিতে সামান্য পানি মিশিয়ে টেস্টটিউবটি আবার ঝাঁকিয়ে নাও। কী ঘটে লক্ষ করো। তেলের দ্রবণটি ঘোলাটে বর্ণ ধারণ করবে। এভাবে সরিষা, নারিকেল ও তিলের তেলের সাহায্যে উক্ত পরীক্ষাটি করো এবং কী ঘটে তা বর্ণনা করো। |
শর্করা, আমিষ ও স্নেহ পদার্থ খাদ্যের এ তিনটি উপাদান থেকে দেহে তাপ উৎপন্ন হয়। এ তাপ আমাদের দেহে কাজ করার শক্তি যোগায়। কোনো খাদ্যে পুষ্টি উপাদান ও তার পরিমাণ জানার জন্য শর্করা, আমিষ ও চর্বির ক্যালরিমূল্য বের করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানির ক্যালরিমূল্য শূন্য ধরে হিসেব করতে হবে।
আমাদের দেহে ১ গ্রাম শর্করা থেকে ৪ কিলোক্যালরি ১ গ্রাম আমিষ থেকে ৪ কিলোক্যালরি এবং ১ গ্রাম চর্বি থেকে ৯ কিলোক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়। |
আমাদের দেহের ভিতর খাদ্য পরিপাক, শ্বসন, রক্তসংবহন ইত্যাদি কার্যক্রম বিপাক ক্রিয়ার অন্তর্গত। বিপাক ক্রিয়া চালানোর জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তাকে মৌলবিপাক বলে। আবার শারীরিক পরিশ্রমেও আমাদের শক্তি ব্যয় হয়। আমরা খাবার থেকে শক্তি পাই।
খাদ্য থেকে দেহের ভিতর যে তাপ উৎপন্ন হয় তা আমরা ক্যালরিতে প্রকাশ করি। ১০০০ ক্যালরিতে ১ কিলোক্যালরি। খাদ্যে তাপশক্তি মাপের একক হলো কিলোক্যালরি। দেহের শক্তির চাহিদাও কিলোক্যালরিতে নির্ণয় করা হয়।
আমার, তোমার, তোমার ছোট ভাই, তোমার বাবার দেহের ক্যালরি চাহিদা এক রকম নয়। আমাদের দেহে দুই ভাবে শক্তি ব্যয় হয় যথা- ১. দেহের অভ্যন্তরীণ কাজে অর্থাৎ মৌলবিপাকে এবং ২. পরিশ্রমের কাজে। প্রতিদিন কার কত ক্যালরি বা তাপ শক্তির প্রয়োজন তা নির্ভর করে প্রধানত বয়স, দৈহিক উচ্চতা এবং দৈহিক ওজনের উপর। এছাড়া বিভিন্ন পেশা এবং স্ত্রী-পুরুষ ভেদে দৈনিক ক্যালরি চাহিদা কম বা বেশি হয়ে থাকে।
নিচের সারণীতে ক্যালরির ব্যবহার ও খাদ্য চাহিদা দেখানো হলো
শিশু, নারী ও পুরুষের বিভিন্ন বয়সে দৈনিক ক্যালরির বরাদ্দ
বয়স (বৎসর) | গড় ওজন (কিলোগ্রাম) | গড় শক্তি (কিলোক্যালরি) | বয়স (বৎসর) | গড় ওজন (কিলোগ্রাম) | (কিলোক্যালরি) |
---|---|---|---|---|---|
বাচ্চা ০.০-০.৫ মাস ০.৬ মাস ১.০ বছর
শিশু ১ – ৩ ৪ -৬ ৭ - ১০
পুরুষ ১০ - ১২ ১৩ – ১৫ ১৬ - ১৯ ২০ - ৩৯ ৪০ - ৪৯ ৫০ - ৫৯ ৬০ – ৬৯ ৭০ + |
৬ ৯
১৩ ২০ ২৮
৪০ ৪৪ ৬৭ ৬৭ ৭০ ৬৮ ৬৫ ৬৫ |
১১৫ ১০০
১৩০০ ১৫০০ ১৮০০
২২০০ ২৫০০ ৩০০০ ২৭০০ ২৮০০ ২৩০০ ২২০০ ১৯০০ | নারী ১০ - ১২ ১৩ - ১৫ ১৬ - ১৯ ২০ - ৩১ ৪০ - ৪৯ ৫০ - ৫৯ ৬০-৬১ ৭০ +
সন্তান সম্ভবা মাতার অতিরিক্ত চাহিদা প্রথম ৩ মাসে দ্বিতীয় ৩ মাসে তৃতীয় ৩ মাসে প্রসূতি মাতার অতিরিক্ত চাহিদা |
৩০ ৪২ ৫১ ৫৪ ৫৩ ৫২ ৫১ ৫১
| ১৯০০ ২২০০ ২০০০ ১৯০০ ১৮০০ ১৬০০ ১৮০০
+১৫০ +২০০ +৩০০ +৪০০
|
একজন লোকের কী পরিমাণ শক্তি দরকার তা আমরা কেমন করে জানতে পারব? একজন লোকের দৈনিক কী পরিমাণ শক্তির দরকার তা প্রধানত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। ১. মৌলবিপাক ২. দৈহিক পরিশ্রম ও ৩. খাদ্যের প্রভাব।
দৈনিক খাদ্য আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হওয়া উচিত। খাদ্য নির্বাচনের সময় আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যে, খাদ্য থেকে দেহ যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালরি পেতে পারে এবং ভিটামিন, খনিজ লবণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো যেন এতে থাকে।
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ প্রমাণ করেছেন যে, খাদ্যে শর্করা, আমিষ, স্নেহ পদার্থ, খনিজ লবণ ছাড়াও আরও কতগুলো সূক্ষ্ম উপাদানের প্রয়োজন। এর অভাবে শরীর নানা রোগে (যেমন- রাতকানা, বেরিবেরি, স্কার্ভি ইত্যাদি) আক্রান্ত হয়। ভিটামিন বলতে আমরা খাদ্যের ঐ সব জৈব রাসায়নিক পদার্থকে বুঝি যা খাদ্যে সামান্য পরিমাণে উপস্থিত থাকে। ভিটামিনসমূহ প্রত্যক্ষভাবে দেহ গঠনে অংশগ্রহণ না করলেও এদের অভাবে দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন বা তাপশক্তি উৎপাদন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্রিয়াগুলো সুসম্পন্ন হতে পারে না।
ভিটামিনের প্রকারভেদ : দ্রবণীয়তার গুণ অনুসারে ভিটামিনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. স্নেহ জাতীয় পদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন, যেমন- এ, ডি, ই, এবং কে।
২. পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন, যেমন- ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং সি।
ভিটামিনের উৎস : গাছের সবুজ পাতা, কচি ডগা, হলুদ ও সবুজ বর্ণের সবজি, ফল ও বীজ ইত্যাদি অংশে ভিটামিন থাকে।
ভিটামিন এ
উৎস : মাছের তেল ও প্রাণিজ স্নেহে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। ক্যারোটিন সমৃদ্ধ শাকসবজি যেমন— লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, টমেটো, গাজর, বীট ও মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন— পেঁপে, আম, কাঁঠালে ভিটামিন 'এ' থাকে। মলা ও ঢেলা মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকে।
কাজ : দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখা, ত্বক ও শ্লেষাঝিল্লিকে সুস্থ রাখা এবং দেহকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা করা, খাদ্যদ্রব্য পরিপাক ও ক্ষুধার উদ্রেক করা, রক্তে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা ও দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
১. রাতকানা : এ রোগের লক্ষণ স্বল্প আলোতে বিশেষ করে রাতে আবছা আলোতে দেখতে না পাওয়া। শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে চোখ সম্পূর্ণরূপে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুকে সবুজ শাকসবজি ও রঙিন ফলমূল খাওয়ানো উচিত। ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আমাদের দেশে টিকা দিবসে বিভিন্ন টিকা কেন্দ্রে শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়।
২. জেরপথালমিয়া : ভিটামিন 'এ' এর অভাব ঘটলে চোখের কর্নিয়ার আচ্ছাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্নিয়ার উপর শুষ্ক স্তর পড়ে। তখন চোখ শুকিয়ে যায় এবং পানি পড়া বন্ধ হয়ে যায়। চোখে আলো সহ্য হয় না, চোখে পুঁজ জমে এবং চোখের পাতা ফুলে যায়।
এ অবস্থায় উপযুক্ত চিকিৎসা করালে এ রোগ থেকে উপশম পাওয়া যেতে পারে। তবে সময় মতো চিকিৎসা না হলে শিশু অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ ছাড়া ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব ঘটলে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স
ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এর কাজ হলো বিশেষ বিশেষ উৎসেচকের অংশ হিসেবে আমিষ, শর্করা ও স্নেহ পদার্থকে বিশ্লিষ্ট করে এবং এদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে মুক্ত হতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) : এর প্রধান কাজ হলো শর্করা বিপাকে অংশগ্রহণ করে শক্তিমুক্ত করা। তাছাড়া স্বাভাবিক ক্ষুধা বজায় রাখতে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।
ভিটামিন বি, (রিবোফ্লেবিন) : অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড ও কার্বহাইড্রেটের বিপাকে অংশ নিয়ে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।
ভিটামিন বি, (পাইরিডক্সিন) : শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
ভিটামিন বি১২ (সায়ানোকোবালামিন) : লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি ও উৎপাদনে সহায়তা করে। শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
দেহের জন্য ভিটামিন ‘সি' অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। এ ভিটামিন পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং সামান্য তাপেই নষ্ট হয়ে যায়। ভিটামিন ‘সি’ দেহে জমা থাকে না তাই প্রতিদিন খাওয়া দরকার। টক জাতীয় ফল আমলকী, আনারস, পেয়ারা, কমলালেবু, লেবু, আমড়া ইত্যাদি ফলে প্রচুর ভিটামিন 'সি' থাকে। সবুজ শাকসবজি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লেটুসপাতা থেকে আমরা ভিটামিন 'সি' পাই। পাকা ফল অপেক্ষা কাঁচা সবজি ও ফলে এ ভিটামিন বেশি থাকে।
ভিটামিন ‘সি’ পেশি ও দাঁত মজবুত করে, ক্ষত নিরাময় ও চর্মরোগ রোধে সহায়তা করে, কণ্ঠনালি ও নাকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
অভাবজনিত রোগ
প্রাপ্ত বয়স্কদের দেহে ভিটামিন ‘সি'-এর অভাব প্রকট হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয় :
• হাড়ের গঠন শক্ত ও মজবুত হতে পারে না।
• হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
• ত্বক খসখসে হয়, চুলকায়, ত্বকে ঘা হলে সহজে তা শুকাতে চায় না।
স্কার্ভি
• দাঁতের মাড়ি ফুলে নরম হয়ে যায়।
• দাঁতের গোড়া আলগা হয়ে যায় এবং গোড়া থেকে রক্ত পড়ে।
• দাঁতের এনামেল উঠে যায় এতে অকালে দাঁত পড়ে যেতে পারে। শিশু ও বয়স্কদের এ রোগ বেশি হয়।
• গ্রন্থি ফুলে যায় এবং মুখে ব্যথা হয়।
• রক্তক্ষরণ সহজে বন্ধ হয় না, ঘা শুকাতে দেরি হয়।
• অন্যান্য রোগ বিশেষ করে সর্দি, কাশি খুব সহজে আক্রমণ করে।
প্রতিকার
এ অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রতিরোধ
কোলের শিশুকে মায়ের দুধের সঙ্গে অন্যান্য পরিপূরক খাদ্য যেমন ফলের রস, সবজির সুপ ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।
ভিটামিন 'ডি'
ভোজ্য তেল, দুগ্ধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য, বিভিন্ন মাছের তেল, ডিমের কুসুম, মাখন, ঘি, চর্বি এবং ইলিশ মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন 'ডি' পাওয়া যায়।
কাজ
• অস্থি ও দাঁতের কাঠামো গঠন।
• অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়ায় ।
• রক্ত প্রবাহে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
অভাবজনিত রোগ
ভিটামিন ‘ডি' এর অভাবে লোহার শোষণ, সঞ্চয় ও হিমোগ্লোবিন তৈরিতে বিঘ্ন ঘটে।
রিকেটস
রিকেটস রোগের লক্ষণ
• ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুদের হাড় নরম হয়ে যায় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।
• পায়ের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যায় এবং দেহের চাপে অন্যান্য হাড়গুলোও বেঁকে যায়।
• হাত-পায়ের অস্থিসন্ধি বা গিট ফুলে যায়।
• বুকের হাড় বা পাঁজরের হাড় বেঁকে যায়।
প্রতিকার
এ অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রতিরোধ
শিশুকে ভিটামিন ‘ডি' সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো উচিত। সূর্যরশ্মি থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তাই শিশুকে কিছুক্ষণের জন্য রৌদ্রে খেলাধুলা করতে দেওয়া উচিত।
অস্টিওম্যালেশিয়া
বয়স্কদের রিকেটস অস্টিওম্যালেশিয়া নামে পরিচিত। এই রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ –
• ভিটামিন ‘ডি' এর অভাবে ক্যালসিয়াম শোষণে বিঘ্ন ঘটে।
• ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের সঞ্চয় কমতে থাকে।
• থাইরয়েড গ্রন্থির কাজের পরিবর্তন ঘটে।
• অস্থি দুর্বল হয়ে অস্থির কাঠিন্য কমে যায় এবং হালকা আঘাতেই অস্থি ভেঙ্গে যাওয়ার অনেক বেশি থাকে।
প্রতিকার
উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। উপযুক্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন “ডি” যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে উক্ত উপাদানগুলোর জন্য ঔষধ সেবন করা একান্ত জরুরি।
প্রতিরোধ
• শিশুকাল থেকেই ভিটামিন 'ডি' ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া সুনিশ্চিত করতে হবে।
• শিশুদেরকে কিছুক্ষণের জন্য রৌদ্রে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে।
ভিটামিন ‘ই’
ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘ই’ এর সবচেয়ে ভালো উৎস। শস্যদানা, যকৃৎ, মাছ-মাংসের চর্বিতে ভিটামিন ‘ই’ পাওয়া যায়।
কাজ
• ভিটামিন ‘ই’ কোষ গঠনে সহায়তা করে ।
• শরীরের কিছু ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
• খুব কম ক্ষেত্রে ভিটামিন 'ই' এর অভাব ঘটে এবং এর অভাবজনিত লক্ষণও কম।
ভিটামিন ‘কে’
সবুজ রঙের শাকসবজি, লেটুসপাতা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ডিমের কুসুম, সয়াবিন তেল এবং যকৃতে ভিটামিন ‘কে’ পাওয়া যায়।
কাজ
• দেহে ভিটামিন 'কে' প্রথ্রোম্বিন নামক প্রোটিন তৈরি করে।
• প্রথ্রোম্বিন রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
অভাবজনিত সমস্যা
যকৃৎ থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয়। পিত্তরস নিঃসরণে অসুবিধা হলে ভিটামিন কে-এর শোষণ কমে যায়। ভিটামিন ‘কে’– এর অভাবে ত্বকের নিচে ও দেহাভ্যন্তরে যে রক্ত ক্ষরণ হয় তা বন্ধ করার ব্যবস্থা না নিলে রোগী মারা যেতে পারে। এই ভিটামিনের অভাবে অপারেশনের রোগীর রক্তক্ষরণ সহজে বন্ধ হতে চায় না। এতে রোগীর জীবন নাশের আশংকা বেশি থাকে।
নিচের ছকটি পূরণ করো
|
ভাত এবং তরকারির সাথে আমরা প্রত্যহ খাবার লবণ খাই, এছাড়া আরও অনেক প্রকার লবণ আছে যা আমাদের দেহের জন্য অতীব প্রয়োজন। খাদ্যে খনিজ লবণ, আমিষ, শর্করা, স্নেহ পদার্থের মতো দেহে তাপ উৎপন্ন করে না। কিন্তু দেহকোষ ও দেহে তরলের জন্য খনিজ লবণ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন, আয়োডিন, লৌহ, সালফার ইত্যাদি লবণ জাতীয় দ্রব্য খাদ্যের সাথে দেহে প্রবেশ করে ও দেহ গঠনে সাহায্য করে। এসব উপাদান দেহে মৌলিক উপাদান হিসেবে থাকে না, অন্য পদার্থের সঙ্গে জৈব ও অজৈব যৌগরূপে থাকে। প্রধানত দুই ভাবে খনিজ লবণ দেহে কাজ করে। যথা- দেহ গঠন উপাদানরূপে ও দেহ অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মাংস, ডিম, দুধ, সবুজ শাকসবজি এবং ফল খনিজ লবণের প্রধান উৎস।
খনিজ লবণ দেহ গঠন ও দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, অস্থি, দাঁত, এনজাইম ও হরমোন গঠনের জন্য খনিজ লবণ অপরিহার্য উপাদান, স্নায়ু উদ্দীপনা ও পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে, দেহের জলীয় অংশে সমতা রক্ষা করে ও বিভিন্ন এনজাইম সক্রিয় রাখে।
মানবদেহে খনিজ লবণের প্রয়োজনীয়তা
ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় গঠনে, রক্ত জমাট বাঁধতে, স্নায়ু ব্যবস্থায় সুষ্ঠু কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে। ফসফরাস দাঁত ও হাড় গঠন, ফসফোলিপিড তৈরি করে। লৌহ রক্তের লোহিত রক্তকণিকা গঠন, উৎসেচক বা এনজাইমের কার্যকারিতায় সহায়তা করে। আয়োডিন থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ ও বিপাকের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে সহায়তা করে। দেহের অধিকাংশ কোষ ও দেহরসের জন্য সোডিয়াম প্রয়োজন। পেশি সংকোচনে পটাশিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রিকেটস : দেহে ভিটামিন 'ডি'-এর সঙ্গে ক্যালসিয়াম শোষিত হয়। এই ভিটামিনের অভাবে রিকেটস রোগ হয়। ভিটামিন অংশে এর বর্ণনা তোমরা পড়েছ।
গলগন্ড : গলগন্ড রোগকে ঘ্যাগ বলে। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহে এ রোগের প্রকোপ বেশি। যখন আমাদের রক্তে কোনো কারণে আয়োডিনের অভাব ঘটে তখন গলায় অবস্থিত থাইরয়েডগ্রন্থি ক্রমশ আকারে বড় হতে থাকে। গলা ফুলে যায়। একে গলগন্ড বা ঘ্যাগ বলে। এ রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ :
• থাইরয়েডগ্রন্থি ফুলে যায়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়
• শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শব্দ হয়।
• গলার আওয়াজ ফ্যাসফেসে হয়ে যায়।
• গলায় অস্বস্তিবোধ হয়, খাবার গিলতে কষ্ট হয়।
• আক্রান্ত ব্যক্তি অবসাদ ও দুর্বলতাবোধ করে।
প্রতিকার
রোগের প্রাথমিক অবস্থায় আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল ও সামুদ্রিক শৈবাল ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
ক্রোটিনিজম
সাধারণত আয়োডিনের অভাবে শিশুদের এ রোগ হয়। এই রোগে আক্রান্ত শিশুর দেহে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তা হলো—
• দেহের বর্ধন মন্থর হয়।
• পুরু ত্বক, মুখমণ্ডলের পরিবর্তন দেখা দেয় ।
• পুরু ঠোঁট, বড় জিহ্বা, মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
প্রতিরোধ
খাবারে আয়োডিনযুক্ত লবণ দিয়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
রক্তাল্পতা বা এ্যানিমিয়া
লোহা, লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিনের গঠন উপাদান। শিশু ও সন্তান সম্ভবা মায়ের খাদ্যে লোহার ঘাটতির জন্য রক্তাল্পতা দেখা যায়। সাধারণত শিশুদের পেটে কৃমি হলে রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে । এর লক্ষণগুলো হলো –
• দুর্বলতাবোধ, মাথা, গা ঝিমঝিম করা।
• বুক ধড়ফড় করা ।
• মাথা ঘোরানো, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠা।
• ওজন হ্রাস ও খাওয়ায় অরুচি দেখা দেয়।
প্রতিকার
লৌহ সমৃদ্ধ শাকসবজি, ফল, মাংস, ডিমের কুসুম, যকৃৎ ও বৃক্ক ইত্যাদি বেশি করে খাওয়া। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা। রোগ কঠিন আকার ধারণ করলে হৃৎপিণ্ডের দ্রুত রক্ত সঞ্চালন ও হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পানি
পানি জীবন ধারণের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। প্রাণী দেহের ৬০-৭০ ভাগই পানি । দেহ গঠনে পানির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। এ পানি অস্থি, মাংস, ত্বক, নখ, দাঁত ইত্যাদি কোষের ভিতরে ও বাইরে থাকে। প্রায় সব খাদ্যেই কম-বেশি পানি থাকে। তবে আমরা আলাদাভাবে পানি পান করে দেহের চাহিদা মেটাই|
দেহ গঠন ছাড়াও পানি দেহের সব অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। পানি ছাড়া দেহের ভিতরে কোনো রাসায়নিক ক্রিয়া হতে পারে না। পানি দেহে দ্রাবক রূপে কাজ করে। বিভিন্ন খনিজ লবণ পানিতে দ্রবীভূত থাকে। পানিতে দ্রবণীয় অবস্থায় খাদ্যের পরিপাক ক্রিয়া চলে। আবার পানিতে দ্রবীভূত থেকেই খাদ্য উপাদান দেহে শোষিত হয়।
কাজ
• পানির জন্যই রক্ত সঞ্চালন ও তাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়।
• পানি দেহ থেকে দূষিত পদার্থ অপসারণ করে। যেমন- মূত্র ও ঘাম।
কলেরা ও উদরাময় রোগে মলের সঙ্গে বা বমির সঙ্গে দেহ থেকে হঠাৎ বেশ কিছু পানি বের হয়ে যায়। ফলে দেহে পানি শূন্যতার সৃষ্টি হয়। কলেরা বা উদরাময় রোগ হলে রোগীকে স্যালাইন বা লবণ পানির শরবত খাওয়াতে হবে। এটা কলেরা বা উদরাময়ের সবচেয়ে সহজ চিকিৎসা। এছাড়া আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র কর্তৃক তৈরি খাওয়ার স্যালাইনের প্যাকেট পাওয়া যায়। প্যাকেটের স্যালাইন পানিতে গুলে রোগীকে খাওয়াতে হয়। সম্প্রতি শস্য স্যালাইন নামক আর একটি খাওয়ার স্যালাইন উদ্ভাবিত হয়েছে। ১ লিটার পানি, ৫০ গ্রাম চালের গুঁড়া ও এক চিমটি লবণ মিলিয়ে এ স্যালাইন তৈরি করা হয়।
কাজ : তোমরা পূর্বের শ্রেণিতে খাবার স্যালাইন বানাতে শিখেছ। এবার তোমরা পুনরায় খাবার স্যালাইন তৈরি করো। স্যালাইন তৈরির সময় তোমরা কী কী সাবধানতা অবলম্বন করবে তা লিপিবদ্ধ করবে। |
শুষ্কতা
কোনো কারণে দেহে পানির পরিমাণ কমে গেলে কোষগুলোতে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। কোষের পানি কমে গেলে অতিরিক্ত পিপাসা হয়, রক্তের চাপ কমে যায়, রক্ত সঞ্চালনে অসুবিধা হয়, বিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। পানির অভাবে দেহের ওজন কমে যায় এবং পেশি ও স্নায়ুকোষ দুর্বল হয়ে পড়ে। দেহে পানির পরিমাণ ২০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে দেহের স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটে, ফলে রোগী অচেতন হয়ে পড়ে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাদ্য
শস্যদানা, ফলমূল, , সবজির অপাচ্য অংশকে রাফেজ বলে। দেহের ভিতর রাফেজের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। রাফেজ কোনো পুষ্টি উপাদান নয়। তবে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাফেজ পৌষ্টিক নালির ভিতর দিয়ে সরাসরি স্থানান্তরিত হয়। ফল ও সবজির রাফেজ, সেলুলোজ নির্মিত কোষপ্রাচীর। আঁশযুক্ত খাবার থেকে রাফেজ পাওয়া যায়।
খাদ্য নির্বাচন
যে সমস্ত খাদ্যবস্তু দেহের ক্যালরি চাহিদা পূরণ করে, টিস্যু কোষের বৃদ্ধি ও গঠন বজায় রাখে এবং দেহের শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলীকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাকে সুষম খাদ্য বলে। অর্থাৎ সুষম খাদ্য বলতে বোঝায় ৬টি উপাদান বিশিষ্ট পরিমাণ মতো খাবার যা ব্যক্তিবিশেষের দেহের চাহিদা মেটায়। বয়স, লিঙ্গভেদ, দৈহিক অবস্থা, শ্রমের পরিমাণ হিসেবে পুষ্টির প্রয়োজনীয় উপাদনগুলো উপযুক্ত পরিমাণে সুষম খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকে। যে শর্ত পালনে খাবার সুষম হয় সেগুলো হলো-
১. প্রতিবেলার খাবারে আমিষ, শর্করা, স্নেহ পদার্থ এই তিনটি শ্রেণির খাবার অন্তর্ভুক্ত করে খাদ্যের ছয়টি উপাদানের অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত করা।
২. প্রত্যেক শ্রেণির খাদ্য বয়স, লিঙ্গ ও জীবিকা অনুযায়ী সরবরাহ করা।
৩. দৈনিক ক্যালরি ৬০-৭০% শর্করা, ১০% আমিষ ও ৩০-৪০% স্নেহ জাতীয় পদার্থ থেকে গ্রহণ করা।
সুষম খাদ্য তালিকা
কতগুলো নিয়ম মেনে একটি সুষম খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে। যথা—
১. প্রথমত খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানগুলো ব্যক্তিবিশেষের বয়স, কর্ম ও শারীরিক অবস্থাভেদে যে বিভিন্ন ধরনের হয় সেদিকে লক্ষ রেখে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করা।
২. দৈহিক প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যের তাপমূল্য বা ক্যালরি তাপ শক্তির পরিমাণ নিশ্চিতকরণ।
৩. খাদ্যে দেহ গঠনের ও ক্ষয়পূরণের উপযোগী আমিষ সরবরাহ করা।
৪. খাদ্যে যথোপযুক্ত ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানির উপস্থিতি।
৫. বিভিন্ন খাদ্যের পুষ্টিমান ও খাদ্যের শ্রেণিবিভাগ সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন। প্রথমে খাদ্যের মূল বিভাগগুলো থেকে খাদ্য বাছাই করা। খাদ্য বাছাইয়ে বৈচিত্র্য থাকা।
৬. খাদ্য তালিকা প্রস্তুতির সময় খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতন থাকা।
৭. ব্যক্তি ও পরিবারের আর্থিক সঙ্গতির দিক ভেবে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করা।
৮. ঋতু ও আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করা।
নতুন শব্দ : আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, সহজ পাচ্যতার গুণক, অ্যামাইনো এসিড, কোয়াশিয়রকর, মেরাসমাস, জেরপথালমিয়া, স্কার্ভি, রিকেট্স, অস্টিওম্যালেশিয়া, প্রথ্রোম্বিন, ক্রোটিনিজম, এ্যানিমিয়া
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা যা শিখলাম-
- বিপাকক্রিয়া চালানোর জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তাকে মৌলবিপাক বলে ।
- ভিটামিন ও খনিজ লবণ আলাদা কোনো খাদ্য নয়। এগুলো অন্য খাদ্য উপাদান থেকে পাওয়া যায়।
- পানি দেহের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পরিপাককৃত খাদ্য উপাদান পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় দেহের সর্বত্র পরিবাহিত হয়।
Read more